এখন পড়ছেন
বিবৃতি

নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে দেবেন না : বিবৃতিতে আল্লামা শফী

p1-21-300x200নাস্তিক, ইসলামবিদ্বেষী ও তাদের সহযোগীদের মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশের নারীসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী।গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি একই সাথে কোনো মহলের চাপে তথাকথিত ‘প্রতিবাদী নারী সমাজ’-এর মহাসমাবেশ কিংবা শাহবাগীদের ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ শ্রমিক সমাবেশের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নে নারীশ্রমিকদের ব্যবহার করতে না দেয়ার জন্য গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠন, মালিকসহ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, হেফাজতের লংমার্চ ও মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সারা দেশে তৌহিদি জনতার যে মহাজাগরণ শুরু হয়েছে, তাতে ভীত ও দিশেহারা হয়ে নাস্তিক-বামপন্থী এবং তাদের সহযোগীরা এখন মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরলমনা নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য তারা কর্মজীবী নারীদের ভুল বুঝিয়ে উসকে দিয়ে মাঠে নামানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও বামপন্থী নাস্তিকদের নেতৃত্বাধীন কিছু নারী সংগঠন এবং এনজিও বিভিন্ন নামে ইতোমধ্যে রাস্তায় মানববন্ধন, সভা-সেমিনার করে হেফাজতে ইসলামের দাবির ব্যাপারে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছে সুশীলসমাজ নামধারী কিছু নাস্তিক ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তি। তারা হেফাজতের ব্যাপারে নানা বিষোদগার করা ছাড়াও হেফাজতের দাবি মানা হলে ‘দেশ মধ্যযুগে ফিরে যাবে’ এবং ‘তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হবে’ মর্মে কাল্পনিক বক্তব্য দিচ্ছে। তারা নারী ও দেশের তৌহিদি জনতা এবং ইসলামের চিরায়ত সংস্কৃতিকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে নাস্তিক মুরতাদ ও তাদের দোসরদের এই অপচেষ্টাও সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, যারা আজ হেফাজতের বিরুদ্ধে নারীদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে, তারা অতি পরিচিত মুখ। তাদের বেশির ভাগই শাহবাগের নাস্তিকদের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চে গমনকারী এবং তাদের সাথে একাত্মতা পোষণকারী। এসব পরিচিতমুখ সব সময় ইসলামের কৃষ্টি-কালচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছেন এবং বিজাতীয় ও ইসলামবিরোধী সংস্কৃতির চর্চায় লিপ্ত। এসব চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষীদের কথায় এ দেশের ধর্মপ্রাণ নারীসমাজসহ তৌহিদি জনতা বিভ্রান্ত হবে না।

তিনি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ দেশের তৌহিদি জনতা ছোটখাটো সব মতভেদ ভুলে ঈমানি দাবিতে এক হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি পূরণ করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও জীবনবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাই হবে সময়োচিত পদক্ষেপ। এর বাইরে অন্য চিন্তা করলে হেফাজতে ইসলাম দাবি আদায়ে তৌহিদি জনতাকে নিয়ে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

বিবৃতিতে আল্লামা আহমদ শফী এ ব্যাপারে আরো বলেন, আমরা আগেই বলেছি, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষাসহ তাদের অধিকার নিশ্চিত করার দাবিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নারীরা ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না কিংবা চাকরি করতে পারবে না- এমন কোনো বিষয় দাবির মধ্যে নেই। এ ব্যাপারে আমাদের দাবির বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মূলত শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চকে ঘিরে সেখানে নারী-পুরুষের যেভাবে অবাধ মেলামেশা, একত্রে রাতযাপন, এমনকি বৈধ সম্পর্ক ছাড়াই পর নারী-পুরুষের একই তাঁবুতে, একই কম্বলের নিচে অবস্থান করে রাতযাপনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার ‘স্লোগান কন্যা’ খাতদের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয় পত্রপত্রিকায়ও এসেছে। শাহবাগী নাস্তিকদের দাবির মুখে একটি পত্রিকা তাদের একটি গল্প প্রত্যাহার করে, গল্পের জন্য গল্পের লেখক ক্ষমা চেয়ে ঘটনার সত্যতাই অনেকাংশে প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন। তারই প্রেক্ষিতে নারী-পুরুষের এ ধরনের অবৈধ মেলামেশা সব ক্ষেত্রেই বন্ধ করা, নারীদের শালীন পোশাক পরার ব্যবস্থা করা এবং নারীদের ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌনহয়রানিসহ যাবতীয় নির্যাতন থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। কুরআনের সুস্পষ্ট বিধানের লঙ্ঘন করে জাতীয় নারী নীতিতে যেসব ধারা সংযোজন করা হয়েছে সেগুলো সংশোধন করার জন্যই আমরা শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ৬ এপ্রিল লংমার্চ শেষে ঢাকায় মহাসমাবেশ চলাকালে মূল মঞ্চের এক কিলোমিটারেরও বেশি দূরে একজন নারী সাংবাদিক বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনায় লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে ঢালাওভাবে হেফাজতে ইসলামকে নারীবিদ্বেষী হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রায়াস চালানো হচ্ছে। ঘটনার পর হেফাজতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং সাথে সাথে এ-ও বলা হয়েছে, ওই নারী সংবাদকর্মীকে হেফাজতের কর্মীরাই প্রাণপণ চেষ্টা করে নিরাপদে গাড়িতে তুলে সরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন, যা ভিডিও ফুটেজেও পরিষ্কার। এ ছাড়া আক্রমণকারীরা অনুপ্রবেশকারী এবং এটা হেফাজতের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টার অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যমূলক ঘটানো হয়েছে বলেও হেফাজতের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম নারী অবদমন নয়, বরং নারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষায় জোরালো ভূমিকা নিচ্ছে।

হেফাজত আমির আরো বলেন, আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে যেখানে নারীদের ন্যূনতম মানবিক অধিকার পর্যন্ত ছিল না, কন্যা সন্তান হলে জীবন্ত কবর দেয়া হতো, সম্পত্তিতে নারীদের কোনো অধিকারই ছিল না, যে সমাজে নারীকে অভিশাপ মনে করা হতো- সেই সমাজে নারীকে সবচেয়ে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ সা:। তিনি নারীকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে আসীন করে তাকে সম্পত্তির অধিকারী ঘোষণা দিয়েছেন। কন্যাসন্তান লালনপালনকারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন এবং পুত্রসন্তানের তুলনায় কন্যাসন্তানের অধিকতর দেখভাল ও প্রয়োজন নির্বাহে পিতার প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান তথা ইসলামে নারীকে প্রদত্ত সেই মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আজ ইসলামি বিধান অনুযায়ী নারীদের অধিকার সংরক্ষিত না থাকা এবং বিধিবিধান না মানার কারণেই নারীরা হত্যা, ধর্ষণ, ইভটিজিং, যৌতুকের অভিশাপ ও যৌন হয়রানির মতো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারীদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহারের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে। নারীজাতিকে এ থেকে রক্ষা করে তাদের প্রকৃত মর্যাদা সংরক্ষিত করতে হলে হিজাব পালন ও সংযত চলাফেরাসহ ইসলামি নির্দেশনা অনুসরণের বিকল্প নেই। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

আল্লামা শফী ঈমানি দাবি আদায়ে আগামী ৫ মে তারিখের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কর্মসূচি বানচাল করতে নারীদের মাঠে নামার চেষ্টা কিংবা অন্য কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে কোনো লাভ হবে না। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ঈমানি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে এবং দাবি আদায় না হলে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

আলোচনা

কোন মন্তব্য নেই এখনও

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

হেফাজতে ইসলামের খবর

https://banglargangai.wordpress.com/wp-admin/widgets.php#available-widgets

ফরহাদ মজহারের কলাম

Join 250 other subscribers