এখন পড়ছেন
খবর

নিরস্ত্র মানুষের উপর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে: সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি

image_24635_0বিএনপি বলেছে, ৫ মে মধ্যরাতের পর রাজধানী ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী লাখ লাখ নিরস্ত্র মানুষের ওপর ভয়াবহতম যে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তা নিয়ে সরকার নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে। ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ এবং বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আজিজ আহম্মেদ অভিযান বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দেশবাসী বিশ্বাস করে না। তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা বলছেন।

বিএনপি মনে করে, পুলিশের এই বক্তব্য চাপিয়ে দেয়া বক্তব্য। পুলিশের বক্তব্য মানুষ আস্থায় নেয় না। হেফাজতের নেতাকর্মীদের হতাহতের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে বিএনপি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। ১৮ দলের ডাকা হরতালের প্রথমদিন শেষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু দলের বক্তব্য তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ হতাহতের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নাকচ করে শামসুজ্জামান বলেন, হানিফের বক্তব্যকে বিএনপি গুরুত্ব দেয়নি। বিএনপি সরকারের বক্তব্য চায়। প্রেসনোট দিতে হবে। দুদু অভিযোগ করে বলেন, সরকারের নানাভাবে সহযোগিতা নিয়ে শাহবাগে গণজাগরণ নামক একটি সংগঠন নানা দাবিতে টানা তিন মাস ধরে সমাবেশ করতে পারলেও হেফাজতকে তিন-চার ঘণ্টা থাকতে দেয়া হয়নি। কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই রাতের আঁধারে বাতি বন্ধ করে নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে দুদু বলেন, ‘আপনারা বলছেন, কৌশলের কারণে রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। তাহলে সকালে কেন এ কৌশল নেয়া হয়নি। সে সময় কেন গণমাধ্যমকে সেখানে রাখা হয়নি।’ তিনি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, আমরা জানতে চাই, সেদিন রাতের অভিযানে হেফাজতের কতজন নিহত হয়েছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া সেদিন অভিযানে কারা নেতৃত্বে ছিল? দেশে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে কিনা? সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ কিনা? সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ না সফল? এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রেসনোট না দেয়ার সমালোচনা করে দুদু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে কোনো বিষয়ে কখনো কখনো সংসদের বাইরে-ভেতরে প্রতিক্রিয়া জানান। কিন্তু এ ঘটনার পর তিনি কিছুই বললেন না।

লিখিত বক্তব্যে দুদু বলেন, ‘দেশে এখন খুনিদের রাজত্ব চলছে। সরকারের পুলিশ বাহিনী দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে প্রতিদিন মানুষ খুনের বর্বর খেলায় মেতে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতারোহণের দীর্ঘ সাড়ে চার বছরে এর বহু প্রমাণ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। সর্বশেষ ভয়াবহ প্রমাণ দেখলো ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং শাপলা চত্বরে সমাবেশের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডব।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গত ৫ মে ও ৬ মে পৈশাচিকতার যে প্রমাণ জাতিকে দেখালো তাতে কেবল দেশবাসীর নিকটই নয় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কতটা ক্ষুণ্ন হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। ক্ষমতার দাম্ভিকতায় মানুষ হয়ে মানুষের ওপর নির্যাতন ও নির্বিচারে গুলি করে পাখির মত মানুষ হত্যার খেলা দেখে বিশ্ববাসী বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে। তিনি বলেন, দেশিয় এবং বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হেফাজতে ইসলামের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যার কথা বলা হলেও সরকার এ পর্যন্ত কোন প্রেসনোটের মাধ্যমে তথ্যের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা স্বীকারোক্তি কোনোটাই করেনি। সরকারের নীরবতাই প্রমাণ করে যে, হেফাজতের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে বলে মানুষ মনে করবে। নির্মমভাবে মানুষ হত্যা বা নিখোঁজ হওয়ার পর সরকারের ভাবটা এমন যে, তারাই যেন শ্রেষ্ঠ ও যোগ্য শাসক। বর্তমানে সারাদেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এক চরম অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এক ভীতিকর নৈরাজ্য পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের মানুষ এখন ভয়াবহ আতঙ্কে দিন যাপন করছে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, রবিবার মধ্যরাতের পর শাপলা চত্বর ও আশেপাশে অবস্থানরত হেফাজতের নেতা-কর্মীরা যখন ঘুমে এবং কেউ কেউ জিকির-আসকারে নিমগ্ন, কেউ নামাজে ধ্যানমগ্ন সেই সময় তাদের ওপর নেমে আসে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ। হতাহতের কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও দেশবাসীকে জানানো হয়নি বিদেশি গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে আড়াই থেকে তিন হাজার লোককে হত্যা এবং দশ হাজারের বেশি মানুষ আহত হবার কথা জানা যাচ্ছে। বিভিন্ন আলোকচিত্র ও ভিডিও ফুটেজে অভিযানে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ, অসংখ্য লাশের ছড়াছড়ি, মৃতদেহের ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চালিয়ে দেয়া এবং ট্রাক ভর্তি লাশ সরিয়ে নেয়ার নৃশংস দৃশ্যাবলী দেখে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও শিউরে উঠেছি। দুদু বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের নামে হরহামেশা মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের, গ্রেফতার, রিমান্ডের নামে নির্যাতন এবং খুন জখমে বর্তমান সরকার এমন এক দানবের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছে যে, সরকারের দুর্নীতি ও নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললেই বন্দুকের গুলির আঘাতে তা স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের সকল অপকর্ম রুখে দিতে বিএনপি ১৮ দলীয় জোট এবং জনগণকে সাথে নিয়ে এখন চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে অহঙ্কারী আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে বন্দোবস্তকরণের জন্য যে সহিংস পথ বেছে নিয়েছে তাতে তাদের পরাজয় অত্যাসন্ন। সত্য ও ন্যায়ের বিজয় হবেই হবে ইনশাল্ল¬াহ। তিনি বলেন, গত সোমবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সারা দেশে তাদের ১৫ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। হরতালকে কেন্দ্র করে ১০৭ জন গ্রেফতার ও ২১১ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম বলেছেন, যখন প্রয়োজন হবে তখন সবাইকে ডাকা হবে। তখন সুযোগ না দিলে আর অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না।’ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামিম প্রমুখ।

লাখ লাখ নিরস্ত্র মানুষের উপর হেফাজত ও খেলাফতের নিন্দা

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর ও খেলাফত মজলিস পৃথকভাবে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখান করে বলেছে, যৌথ বাহিনীর বর্বরতম অভিযান সম্পর্কে কমিশনার আওয়ামী দলীয় মুখপাত্রের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। তারা অভিযানের নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন ও আলো নিভিয়ে পরিচালিত পুলিশ-র্যাব-বিজিবির সাঁড়াশি হামলায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ, গুমকৃত লাশ ফেরত ও এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

গতকাল বাদ আসর হেফাজতের লালবাগ কার্যালয়ে জরুরি সভায় ঢাকা মহানগরীর নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলতে শুরু করছে। মতিঝিল শাপলা চত্বরে ঈমানদার জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে সরকারি বাহিনী দিয়ে নারকীয় অভিযান চালিয়ে তিন হাজার মুসলমানকে শহীদ করেও দানব সরকারের রক্ত পিপাসা মিটেনি। তারা আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে লক্ষ লক্ষ জনতাকে আসামি করে এদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি মহল ফেসবুকে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবসহ নেতৃবৃন্দের মৃত্যুর সংবাদ ছড়াচ্ছে। এটি নিছক গুজব ছাড়া কিছু নয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রখ্যাত আলেমে দীন, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ৯ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্মম নির্যাতন শুরু করেছে। অন্যান্য নেতাদেরও গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় দেশবাসীকে সতর্কভাবে ঈমানি আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

মাওলানা আলতাফ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর অন্যতম নেতা মাওলানা ফারুক আহমদ, মাওলানা হাফেজ আবুল ফারাহ আমিনী, মাওলানা নাছিরউদ্দীন, মাওলানা কাজী আজিজুল হক, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা সোহরাব হোসাইন প্রমুখ।

খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এক বিবৃতিতে বলেন, যৌথ বাহিনীর লোমহর্ষক সাঁড়াশি আক্রমণ ও গণহত্যা ইসরাইলি বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। অপারেশন সিকিউরড শাপলা ওয়াচ-এর নামে গণহত্যা চালিয়ে ডিএমপি কমিশনার ৩ দিন পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে, ‘হেফাজতের টার্গেট ছিল ব্যাংক লুট ও সচিবালয়ে হামলা’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ডিএমপি কমিশনার আওয়ামী দলীয় মুখপাত্রের মতো বক্তব্য দিয়েছেন।

আলোচনা

কোন মন্তব্য নেই এখনও

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

হেফাজতে ইসলামের খবর

https://banglargangai.wordpress.com/wp-admin/widgets.php#available-widgets

ফরহাদ মজহারের কলাম

Join 250 other subscribers