এখন পড়ছেন
কলাম

‘গণহত্যা’ কী? – ফরহাদ মজহার

imagesসরকার যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে পরিকল্পিত ভাবে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে ‘নির্মূল’ করাই সরকারের উদ্দেশ্য। একে কেন গণহত্যা বলা হচ্ছে তাতে অনেকে আপত্তি করছেন। এই হত্যাযজ্ঞ যারা চালিয়ে যেতে চান তারাই এই প্রশ্ন তুলছেন। যদি রক্ত তারা ঝরাতে না চান তাহলে সব পকে অবিলম্বে হানাহানি বন্ধ করবার জন্যই তারা ডাক দিতেন। কূটতর্ক করতেন না। কিন্তু তারা তা না করে এই হত্যাকাণ্ড গণহত্যা কি না সেই কূটতর্কই শুরু করেছেন। আমি এর আগে বারবার বলেছি, সরকার যেভাবে মানুষ হত্যা করছে সেটা গণহত্যাই। এই হত্যালিপ্সা নিবৃত্ত করা দরকার। পুলিশের প্রতিও দাবি জানাতে হবে যেন অবিলম্বে গুলি করে মানুষ হত্যা বন্ধ করে। জামায়াত-শিবিরকেও অবিলম্বে সর্বপ্রকার হামলা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভে আন্দোলনের জন্য বাধ্য করতে হবে। আচরণের মধ্য দিয়েই সরকার অর্থাৎ পুলিশকে বোঝাতে হবে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে কোন বাধা দেবেন না। রক্ত ঝরুক এটা আমরা আর চাই না। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণহত্যা কাকে বলে সে সম্পর্কে এখানে আলোচনা করব।

অনেকের ধারণা যে, হিটলার যেভাবে তাদের গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মেরেছে, হত্যার মাত্রা ও হত্যার ধরণ সেইপর্যায়ের না হলে তাকে ‘গণহত্যা’ বলা যাবে না। হিটলারের ইহুদিনিধন নিঃসন্দেহে একটি বর্বর ও ভয়ানক অপরাধ। এই নিধনযজ্ঞ এখন এমন একটা মিথে পরিণত হয়েছে, যাতে অনেকের ধারণা একই মাত্রার বা একই ধরনের হত্যাকাণ্ড না হলে তাকে গণহত্যা বলা যাবে না। যেমন, গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে না মারলে সেটা গণহত্যা নয়। কিম্বা হত্যার সংখ্যা কয়েক লক্ষ ছাড়িয়ে না গেলে তাকেও গণহত্যা বলা যাবে না। এই ধারণা ভুল। যারা ইহুদিবাদী (বা জায়নবাদী) রাষ্ট্রের পক্ষে, তারা সবসময়ই এই তর্কটা করেন। তবে তাদের দিক থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার। এর কারণ হোল ইসরাইল যেভাবে প্যালেস্টাইনিদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালায় তাকে যেন ‘গণহত্যা’ হিশাবে গণ্য করা না হয়। প্যালেস্টাইনের জনগণের বিরুদ্ধে যে হত্যাযজ্ঞ হচ্ছে তাকে ‘গণহত্যা’ হিশাবে স্বীকার না করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিষ্কার।

কিন্তু তা সত্ত্বেও একাত্তর সালে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের যেভাবে নির্বিচারে গুলি করে বা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে, তাকে ‘গণহত্যা’ই বলা হয়েছে। হিটলারের গ্যাস চেম্বারে কাউকে পুড়ে মরতে হয় নি। যে সংখ্যা বাংলাদেশ দাবি করেছিল, সেই সংখ্যা নিয়েও বিশেষ কোন তর্ক ওঠে নি। আমরা বিশ্বাস করি একাত্তরে তিরিশ লাখ মানুষ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। সম্প্রতি এই সংখ্যা নিয়ে তর্ক উঠেছে, তর্ক তুলেছেন গবেষকরা। আসলে কে কোথায় কিভাবে মারা গিয়েছেন তার কোন প্রামাণ্য তথ্য আমাদের নাই। এই সংখ্যা যাচাই-বাছাইয়ের একটা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেটা আর হয় নি। সংখ্যার গরমিল অনেক বড় হওয়ায় এই দরকারি কাজটি আর সম্পন্ন হয়নি।

যারা ইহুদিবাদ ও ইহুদি রাষ্ট্রের পক্ষে তাদের কাছে মৃতের সংখ্যা ও হত্যার ধরণ খুব সংবেদনশীল ব্যাপার। একই সঙ্গে ইহুদিবাদী বা জায়নিস্ট রাজনীতির জন্যও বটে। তেমনি আমাদের জন্যও। একই ভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য একাত্তরে কতজন মানুষ নিহত হয়েছেন, সেই সংখ্যা খুবই সংবেদনশীল বিষয়।

আমাদের আলোচনা কত মানুষ মরলে আর কিভাবে মারলে সেটা ‘গণহত্যা’ হয় আর কিভাবে হয় না, সেই তর্ক নয়। সুনির্দিষ্ট ভাবে আমরা বোঝার চেষ্টা করব ‘গণহত্যা’-র সংজ্ঞার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিমত কী? গণহত্যার ক্ষেত্রে সংখ্যার বিতর্ক নাই। আমরা ‘গণহত্যা’ ব্যাপারটা কী সেটা বুঝে নিতে চাই। কিভাবে হত্যা করলে সেটা ‘গণহত্যা’ হয় সেটা আমাদের বুঝতে হবে।

নাৎসিরা যেভাবে ইহুদিদের হত্যা করেছিল সেই অপরাধের বিশেষ ধরণকে বোঝাতে রাফায়েল লেমকিন (১৯০০-১৯৫৯) ‘জেনোসাইড’ কথাটি ব্যবহার করেন। এর একটা আইনী সংজ্ঞা পরে তৈরি হয়। সে প্রশ্নে পরে আসছি। তবে একেই আমরা বাংলায় গণহত্যা বলি। বাংলায় আমরা অবশ্য একে দুই ভাবে ব্যবহার করি। ইংরাজি ‘ম্যাসাকার’ বা ধ্বংসযজ্ঞ হিশাবে। তখন এর যে আন্তর্জাতিক আইনি তাৎপর্য আছে সেটা স্থগিত থাকে। অর্থাৎ গণহত্যার প্রতিশব্দ হিশাবে ম্যাসাকার কথাটা অনুবাদ হিশাবে ব্যবহার করি। ফলে এক দিনের কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ষাটজন মানুষ ও বহু হতাহত ঘটনার মতো নির্মম হত্যাকাণ্ডকে যদি কেউ ‘গণহত্যা’ বলে তারা ঠিকই বলেছেন। পহেলা মার্চ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত আমার সামনে যে হিশাব রয়েছে তাতে দেখছি ৯২ জন জলজ্যান্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পত্রিকা ও তথ্যের উৎস ভেদে সংখ্যার তারতম্য রয়েছে, কিন্তু সেই তর্কে আমি যাচ্ছি না। বেগম খালেদা জিয়া তার সংবাদ সম্মেলনে একে সঠিক ভাবেই গণহত্যা বলেছেন। তবে আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে এর একটা আইনি মানেও আছে।

গণহত্যার ধারণাটির উৎপত্তি ১৯৪৪ সালে। তার পরের বছরই নুরেমবার্গে আন্তর্জাতিক মিলিটারি ট্রাইব্যুনালে নাৎসি নেতাদের বিচার হয়। তাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তখন ‘গণহত্যা’ কথাটা আইনি ধারণা হিশাবে ব্যবহার করা হয় নি, তবে যখন ১ অক্টোবর ১৯৪৬ সালে রায় ঘোষণা করা হয় তখন ‘গণহত্যা’ কথাটি বর্ণনাত্মক অর্থে, অর্থাৎ অপরাধের মাত্রা ও ধরণ বোঝাবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।

তাহলে আইনি দিক থেকে ধারণাটিকে কিভাবে আমরা বুঝব?

জাতিসংঘের সাধারণ সভা ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৮ তারিখে ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তির জন্য চুক্তি’-র প্রস্তাব গ্রহণ করে। বিশটি রাষ্ট্র তা র‌্যাটিফাই করার পর ১২ জানুয়ারি ১৯৫১ সালে এটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়।

কিন্তু আন্তর্জাতিক মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা যুদ্ধাবস্থায় ‘গণহত্যা’-র বিচার করলেই শান্তির সময় বা যখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে না তখন যদি ‘গণহত্যা’ হয় তাকে আমলে নেন নি। তারা সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে যুদ্ধ লেগে যাবার পর যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কেবল তাকেই আমলে নিয়েছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিকালীন সময়ে ‘গণহত্যা’-র বিষয় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। ১৯৪৬ সালে কিউবা, পানামা ও ইন্ডিয়া একটি খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করে। এর উদ্দেশ্য ছিল এই সত্য প্রতিষ্ঠা যে যুদ্ধের সময় ছাড়াও শান্তির সময়, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের যুদ্ধবিগ্রহ নাই, শান্তি বজায় আছে এমন পরিস্থিতিতেও ‘গণহত্যা’ হতে পারে। সেই অপরাধ প্রতিরোধ যেমন করা দরকার তেমনি অপরাধীর শাস্তিবিধানও দরকার। এটাও জানান দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল যে এই ধরণের অপরাধ সার্বজনীন আইনি এখতিয়ারের অধীন (universal jurisdiction)। জাতিসংঘ ১১ ডিসেম্বর ১৯৪৬ সালে ৯৬ (১) প্রস্তাব পাস করে। এতে ঘোষণা দেওয়া হয় ‘‘গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি অপরাধ যা প্রতিটি সভ্য দেশ নিন্দা করে”। এই অপরাধ শান্তির সময়ে নাকি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে হয়েছে সেই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ দুই অবস্থাতেই এই ধরণের অপরাধ সংঘটিত করা নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিশাবে গণ্য হয়। এটাও স্বীকার করা হয় যে ‘গণহত্যা’ আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়। তবে এই অপরাধ বিচার করবার আইনি এখতিয়ার কার সে বিষয়ে কিছু বলা হয় নি। তবে শেষাবধি পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে গণহত্যাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক যে চুক্তি সমাপ্ত হোল, সেখানে ‘গণহত্যা’কে বিশেষ ধরণের অপরাধ হিশাবেই শুধু স্বীকার করা হয় নি; একে প্রতিরোধ করবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়দায়িত্বকেও স্বীকার করে নেওয়া হোল। অর্থাৎ এই ধরণের অপরাধ ঘটবার লণ দেখা দিলে তাকে বন্ধ করবার দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রকে গণহত্যা প্রতিরোধের আইন পাস করবার কথাও বলা হোল এবং এই ধরণের অপরাধে কেউ অপরাধী হলে তাকে আন্তর্জাতিক আদালতে হাজির করবার দায়ও রাষ্ট্রের ওপর বর্তানো হোল। আর্টিকেল ৯ অনুযায়ী, এই অপরাধ বিচারের দায়দায়িত্ব দেওয়া হোল ইন্টারনেশানাল কোর্ট অব জাস্টিসের ওপর।

‘গণহত্যা’র আইনি সংজ্ঞায় প্রবেশের আগে এই ইতিহাসটুকু বলবার কারণ হচ্ছে, কেউ যদি মনে করে থাকেন গণহত্যা শুধু যুদ্ধের সময় হয়, শান্তির সময় নয়, তাদের ভুল ভাঙানো দরকার। দ্বিতীয়ত, অনেকে মনে করতে পারেন গণহত্যার বিচার শুধু গণহত্যা ঘটালেই হবে তা নয়, এই ধরণের অপরাধ যেন না ঘটে তার জন্য রাষ্ট্র প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কি না সেটাও দেখার বিষয়।

আমরা এবার আইনি সংজ্ঞায় যাই।

গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও শাস্তি বিধানের আন্তর্জাতিক চুক্তির আর্টিকেল ২ অনুযায়ী : গণহত্যার অর্থ হচ্ছে কোন গোষ্ঠীকে পুরাপুরি কিম্বা তাদের কোন একটি খণ্ড বা অংশকে ধ্বংস করা। কী ধরনের গোষ্ঠী? (১) যে অর্থে আমরা নিজেদের বাঙালি জাতি বুঝি সেই অর্থে; (২) যে অর্থে পাহাড়ি বা সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নিজেদের একটি গোষ্ঠী মনে করে; (৩) যে অর্থে ইংরেজি ‘রেইস’কে জাতি অর্থে আমরা বুঝি আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে (৪) যে অর্থে ধর্মীয় গোষ্ঠীকে আমরা বুঝি।

তাহলে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে পুরাপুরি কিম্বা তার কোন খণ্ড বা অংশকে হত্যা বা ধ্বংস করা গণহত্যার মধ্যে পড়ে। যেমন এই গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করা, তাদের শারীরিক ও মানসিক তিসাধন করা, এই গোষ্ঠীকে পরিকল্পিত ভাবে এমন অবস্থায় ঠেলে দেওয়া যাতে তাদের পুরাপুরি বা আংশিক শারীরিক তিসাধন করা যায়। ইত্যাদি।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ভাবে জামায়াত-শিবির ‘নির্মূল’ করবার রাজনীতি চলছে, সেটা আমরা জানি। এত দিন এই ‘নির্মূল’ কথাটার অর্থ মানুষ ধরে নিয়েছিল বিচার। কিন্তু যারা নির্মূলের রাজনীতি করছিলেন তারা নানাভাবেই ব্যক্ত করছিলেন যে তারা আসলে বিচার নয়, ‘নির্মূল’ই করতে চান। তার পরেও জনগণ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার হোক সেটা চেয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের স্কাইপ কেলেংকারি ফাঁস হয়ে যাবার পর এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আসলে বিচার হচ্ছে না। কাদের মোল্লার বিচারের রায় ফাঁসি না হওয়ায় আমরা দেখলাম শাহবাগ নামে একটি ঘটনা ঘটছে। সেখানে বিচার নয়, অপরাধীদের ফাঁসি দেবার জন্য রাতদিন দাবি করা হচ্ছে। শাহবাগ থেকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে যারা অভিযুক্ত তাদের ফাঁসি ছাড়া অন্য কোন রায় তারা মানবে না।

নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিক্ষোভে জানাবার সব পথ ক্ষমতাসীনরা বন্ধ করে দেওয়ায় জামায়াতে ইসলামী বলপ্রয়োগের পথে যায়। জনগণ ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষিত হলে পহেলা মার্চ বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করে। সব মানবিক রীতিনীতি লংঘন করে পুলিশ সরাসরি বিক্ষোভকারীদের গুলি চালায়। নির্বিচার গুলি চালাবার নির্দেশ সরকারের প থেকেই এসেছে। অর্থাৎ হত্যার উদ্দেশ্যেই গুলি চালানো হয়। যারা বিক্ষোভ করছিলেন এবং যারা হতাহত হয়েছিলেন, তাদের খুব কমই জামায়াত-শিবিরের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সরকার সমর্থক গণমাধ্যম এদের সবাইকেই জামায়াত-শিবির হিশাবে অভিহিত করে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম নির্বিচার হত্যার পক্ষে যুক্তি দিতে থাকে।

আন্তর্জাতিক আইনের দিক থেকে এই ধরণের সুনির্দিষ্ট ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড গণহত্যাই। আইনগত দিক থেকে এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিশাবে প্রমাণ করা চলে। সরকার সমর্থক গণমাধ্যমগুলো একে এখন অস্বীকার করবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তাদের জন্য গণহত্যাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিশাবে কী কী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সে সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলে শেষ করব।

আর্টিকেল ৩ অনুসারে, অপরাধগুলো হচ্ছে- (১) গণহত্যা, (২) গণহত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করা (এর উদ্দেশ্য হচ্ছে গণহত্যা ঘটবার আগেই যেন তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়), (৩) গণহত্যায় সরাসরি প্ররোচনা এবং জনগণের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করে গণহত্যা সংঘটিত করবার জন্য প্ররোচিত করা, (৪) গণহত্যার চেষ্টা করা এবং (৫) গণহত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকা। বাংলাদেশে শাস্তিযোগ্য এই সব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না তার বিচার আমি পাঠকের ওপর ছেড়ে দিলাম।

আমরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার চাই। এটা নিছকই শহীদ ও শহীদ পরবারের প্রতি আমাদের দায় মাত্র নয়, একই সঙ্গে গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের নৈতিক শক্তিরও জায়গা। সেই দিক থেকে যদি বিচার করি তাহলে অবশ্যই আমরা এমন কোন রাজনীতিতে জড়িত থাকতে পারি না যে রাজনীতি ‘নির্মূল’ করবার কথা বলে মূলত আরেকটি গণহত্যারই প্ররোচনা দেয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করতে হলে এই আত্মঘাতী রাজনীতির পথ পরিহার করতে হবে।

৫ মার্চ ২০১৩। ২১ ফাল্গুন ১৪১৯। শ্যামলী।

farhadmazhar@hotmail.com

আলোচনা

কোন মন্তব্য নেই এখনও

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

হেফাজতে ইসলামের খবর

https://banglargangai.wordpress.com/wp-admin/widgets.php#available-widgets

ফরহাদ মজহারের কলাম

Join 250 other subscribers